3

সাজেক

মেঘ দেখতে চাইলে এখন আর অন্য কোন দেশে যেতে হবে না , আপনি চাইলে এখান আমাদের দেশ থেকে মেঘ দেখতে ও ছুঁতে পারবেন , আর এজন্য আপনাকে যেতে হবে  মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি যেখানে সত্যিকারের মেঘ এসে ঝাপসা করে দিবে আপনার চারপাশ। সাজেক ভ্যালি, বর্তমানে  বাংলাদেশী ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে  জনপ্রিয়  পর্যটন কেন্দ্র ।সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাজেকের উচ্চতা ১৮০০ ফুট। সাজেকের অবস্থান  রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ি  থেকে সাজেক যাতায়াত  অনেক সহজ। খাগড়াছড়ি  জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার ।

হ্যালিপ্যাড থেকে সাজেক

 

উপযুক্ত সময়

সাজেকের রূপ একেক সময় একেক রকম  সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। বছরের যে কোন সময় সাজেক ভ্রমণ করা যায় । তবে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সমটায়ই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে ভালো।

 

আমার এই রিসোর্ট ছিলাম 

 

আমার দেখা সাজেক

সোশাল মিডিয়া, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকয় সাজেকের কথা এত শুনেছি যে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না , ব্যাক-প্যাক গুছিয়ে সেপ্টেম্বর এর শেষ সপ্তাহে সাজেকের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরি । আমার ভ্রমণ সঙ্গী ছিল আমার এলাকার এক  ছোট ভাই । আমারা ঢাকা কলাবাগান থেকে হানিফ পরিবহনে রওনা করি । রাত ১০.৩০ মিনিটে আমাদের  বাস খাগড়াছড়ির   উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে । ভোর ৫.৩০ মিনিটে আমারা খাগড়াছড়ি  শহরের শাপলা চত্বরে নেমে পরি ।

 

খাগড়াছড়ি  থেকে সাজেকে জীপগাড়ি (চাঁন্দের গাড়ি), সি.এন.জি, মটরসাইকেল করে  যাওয়া  যায় চাঁন্দের গাড়িতে  ১০ থেকে ১২ জন যাওয়া  যায় । আমরা রাতে বাসে উঠেই ফেসবুকের মধ্যমে ৬ জনের একটি গ্রুপ এর সাথে যুক্ত হয় । শাপলা চত্বরে নেমে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করে আমারা ৮ জনের  গ্রুপ চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ করে সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি । সকাল ৯ টার মধ্যে আমার দিঘীনালা পৌঁছে  যাই ।

 

 

দিঘীনালা থেকে বাকি রাস্তা নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহীনির এসকোর্টে যেতে হয় । সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিনে দুইবার পাওয়া যায় । সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে একবার, আবার ২ টা ৩০ মিনিটে আরেকবার। এসকোর্ট মিস করলে আপনাকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, আর বিকেলের টা মিস করলে আপনাকে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 

খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে সময়  লাগে দুই থেকে তিন ঘন্টা। এই সমযয় আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলার সময়টুকু স্মরণীয়  হয়ে থাকবে। চারদিকে সারি সারি পাহাড়  আর সবুজের সমারোহ ভুলিয়ে দেই  পথের সব ক্লান্তি। আমার বেলা ১ টার দিকে সাজেকে পৌঁছে  যাই ।

চাঁন্দের গাড়ি থেকে নেমে আমাদের গ্রুপের বাকি ৬ জন  আগেই ঠিক করে রাখা হোটেলে উঠে পরে । আমারা ২ জন বিভিন্ন হোটেল  ঘুরে দরদাম করে হোটেল ঠিক করি । সাজেকের হোটেল গুলি মূলত একটি রাস্তা কেন্দ্রীক, রাস্তার একপাশের হোটেল থেকে  ইন্ডিয়ান ভিউ , আর একপাশ  থেকে বাংলাদেশ ভিউ দেখা যায়।

হোটেলে  ফ্রেশ হয়ে দুপুরের  খাবার খেয়ে বিশ্রাম করি। বিকালে বের হয়ে  রুইলুই পাড়া ঘুরে দেখে চলে যাই হ্যালিপ্যাডে,  হ্যালিপ্যাডে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটিয়ে সাজেকের আশপাশটা ঘুরে দেখি । রাতে স্থানীয় খাবার খেয়ে আশেপাশের ভিউ দেখে হোটেলে ফিরে এসে সেদিনকার মত ঘুমিয়ে  পরি।

 

দ্বিতীয়  দিন ভোরে চাঁন্দের গাড়ি করে চলে যাই হ্যালিপ্যাডে। হ্যালিপ্যাড  থেকেই সূর্যোদয় এর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে চাঁন্দের গাড়ি করে চলে যাই কংলাক পাহাড়ের  পাদদেশে । কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের  প্রধান আকর্ষণ। আর সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম কংলক পারা লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। কংলাক পাহাড় এর  উপর থেকে সাজেকের আশপাশটা খুব ভালোভাবে দেখা যায় ।


কংলাক পাহাড় থেকে সাজেক

 

কংলাক পাহাড় ট্রেকিং করে সাজেক ভ্যালি এসে নাস্তা করে হোটেল এ ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে  খাগড়াছড়ি  ব্যাক করার প্রস্তুতি নেই । চাঁন্দের গাড়ি গুলি সাধারণত ১০ টা থেকে সাড়ে ১১ টার মধ্যে  সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি  উদ্দেশে রওনা করে ।

আমারা বেলা ২ টার দিকে খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছি । খাগড়াছড়ি  শহরে দুপুরের খাবার খেয়ে আশেপাশের বিভিন্ন স্পট ঘুরে রাতের বাসে ঢাকা ব্যাক করি।
 

সাজেকের রিসোর্ট ও কটেজ / হোটেল

সাজেকে থাকার জন্যে প্রায় শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ আছে। এক রাতের জন্যে রুম নিতে রিসোর্ট ভেদে ১৫০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া লাগবে। ছুটির দিনে যেতে চাইলে আগে মাসখানেক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো, নয়তো ভালো রুম পাবার নিশ্চিয়তা কম। আর কম দামে থাকতে চাইলে আদিবাসী কটেজ গুলোতে থাকতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নতুন নতুন অনেক কটেজ হয়েছে। সাজেকের সব কটেজ থেকেই মোটামুটি সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়।

 

সাজেক এর খাওয়া দাওয়া

সব রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা আছে তাই আগেই রিসোর্টগুলোতে বলে রাখলে পছন্দমত রান্না করে দিবে সেক্ষেত্রে প্রতিবেলা প্রতিজন ১০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে আর মেনু হিসেবে পাবেন ভাত আলুভর্তা, মুরগীর মাংস ইত্যাদি।

 

চাইলে রাতে বার বি কিউও করতে পারবেন। এছাড়া আদিবাসী ঘরেও খাওয়া যায়, আগে থেকেই বলে রাখতে হবে কি খাবেন, তাহলে রান্না করে দিবে। সাজেকে খুব সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাবেন চেখে দেখতে ভুল করবেন না।